আমরা (প্রায়) সবাই বর্তমানে রেসলিং বলতে শুধু WWE কেই বুঝি এবং এইরকম ভাবার কারণও আছে যথেষ্ট, অন্যান্য প্রো-রেসলিং কোম্পানিগুলি পপুলারিটী এবং ইনকামে WWE এর থেকে বহু-বহু দূরে অবস্থিত, তাই অদুর ভবিষ্যতে যে রেসলিং এর ধারনা পালটাবে এমনটা আমার মনে হয়না। 

সে যাইহোক, আমাদের অনেকেরই জানার ইচ্ছা থাকে যে এই WWE এর শুরুর শুরু হয় কোথা থেকে? কিকরে এলো এই WWE? এইসব প্রশ্নের উত্তর যারা জানেন তারা পোস্টটা সেফলি ইগ্নোর করতে পারেন কিন্তু যারা জানেননা তাদের জন্যই এই পোস্টটী লিখতে শুরু করছি…। 

এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা বর্তমানে WWE নামে পরিচিত কোম্পানিটির শুরু, উত্থান, পতন প্রভৃতি বিষয়ে অনেককিছু জানতে পারবেন এবং এছাড়াও অন্যান্য রেসলিং কোম্পানিগুলির সম্বন্ধে কিছু বেসিক জিনিস জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ধৈর্যশীলতার পরিচয় পাবো এই পোস্টের মাধ্যমে কারন পোস্টটি আকারে যথেষ্টই বড় যদিও অতি অল্প সময়ে লেখা। আপনাদের সুবিধার জন্য পোস্টটিকে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে দিব, তাহলে আর বেশী না বকে শুরু করা যাক –

•• শুরুর শুরু, NWA :- এইসবকিছুর শুরুর শুরু হয় The National Wrestling Alliance বা NWA থেকে। “Alliance” শব্দের অর্থ হল সঙ্ঘ বা জোট, NWA প্রকৃতপক্ষে ছিল কয়েকজন প্রবর্তকদের মিলিত সঙ্ঘ বা পরিচালনা পর্ষদ, এই প্রবর্তক (বা প্রোমোটার) –রা আগেকার দিনে নিজ নিজ এলাকায় আঞ্চলিক স্তরে নিজেদের মতো করে প্রো রেসলিং চালাতো, এবং এদের রেসলারেরাও মূলত সেইসব নির্দিষ্ট অঞ্চলেই জনপ্রিয় ছিল, এরা আলাদা আলাদা থাকায় এদের পপুলারিটি বা সংগঠনও ছিল খুব নিম্নমানের। পরবর্তিতে ১৯৪৮ সালে এদের জোট থেকেই NWA এর উৎপত্তি হয়।

জোট হবার পর থেকে তাদের সবাইয়ের মধ্যে একটিই চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট থাকতো অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নও থাকতো একটায় 😛 । এখন এদের মধ্যে মাঝে মাঝেই চ্যাম্পিয়ন নিয়ে টানাটানি পরতো, কারন একজন রেসলার দেশের একটী অংশে ফেমাস হলেই যে সে অন্য অংশেও ফেমাস হবে তার কোন মানে নাই। প্রত্যেক প্রোমোটারই নিজেদের এলাকাতে পপুলার কোন রেসলারকে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখতে চাইতো, তাই এদের মধ্যে ঝামেলা তো লাগারই ছিল।  

•• WWWF এবং WWF এর উৎপত্তি :-  এদের মধ্যে উত্তরপূর্বের প্রোমোটারেরা ছিল বাকিদের থেকে অধিক ক্ষমতাবান এবং অর্থবানও বটে, তাই এরা সবসময় নিজেদের জোর খাটাবার চেস্টা করতো। বাডি রজার্স (Buddy Rogers) ছিল তখনকার চ্যাম্পিয়ন যে ছিল উত্তর পুর্বে ফেমাস তাই তখন বাকি দিকের প্রোমোটারেরা মিলে ঠিক করলো যে চ্যাম্পিয়ন এমন কাউকে করা হবে যে উত্তরপূর্বে পুপুলার নয়। 

যেমন ভাবা তেমন কাজ, তারা মিলিতভাবে ভোটের মাধ্যমে (উত্তরপুর্বে ফেমাস নয় এমন একজন রেসলার) Lou Thez কে চয়ন করলো এবং সে Buddy কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল, যেটা উত্তরপূর্বের প্রোমোটারেরা (বিশেষ করে ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র) মেনে নিতে পারলো না। আর উত্তরপুর্বের হাতে সেরকম ক্ষমতাও ছিল ফলে বাকি দিকের প্রোমোটারদের থেকে তথা NWA থেকে আলাদা হয়ে এরা নিজেদের একটা আলাদা রেসলিং ফেডারেশন খুলে বসলো এবং এর নাম দিল World Wide Wrestling Federation বা WWWF। 

এই ফেডারেশনের মধ্যে সবথেকে পাওয়ারফুল প্রোমোটাররা ছিল ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র (Vince McMahon Sr.) এবং টুটস মন্ড্‌ট (Toots Mondt)। ১৯৭৬ সালে Mondt –এর মৃত্যুর পরে WWWF তার নাম পরিবর্তন করে WWF (World Wrestling Federation) করে নেয়।

•• মালিক পরিবর্তন এবং ভিন্স মিকম্যানের আগমন :- ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র ছিলেন খুবই গোঁড়া প্রকৃতির মানুষ এবং তিনি ভাবতেন রেসলারদেরকে সবাইয়ের নজরের বাইরে তথা স্পটলাইটের বাইরে রাখা উচিত। হাল্ক হোগান একটা মুভিতে অংশগ্রহন করাতে ভিন্স (সিনিয়র) তাকে ফায়ার করে দেন, যেটি ছিল ভিন্সের গোঁড়ামির মোক্ষম উদাহরণ। ১৯৮৩ সালে ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র, WWF কে তার পুত্র ভিন্স মিকম্যানকে বিক্রি করে দেন (হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন, ভিন্সের ফ্যামিলি এরকমই, বাপের পরে বেটা সামলায় না, বেটাকে কিনে নিতে হয়, মজা করছি)। 

ভিন্স মিকম্যান (সিনিয়রের পুত্র) ছিলেন অতিরিক্ত চালাক এবং দূরদর্শিতা সম্পন্ন মানুষ। অন্যান্য রেসলিং কোম্পানিদের বিপরীতে ভিন্সের মাথায় ছিল যে কেবল (Cable) টিভির রাজত্ব বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে রেসলিং আর শুধুমাত্রই আঞ্চলিক স্তরে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, একে গ্লোবাল স্তরে নিয়ে যেতে হবে। 

ভিন্স সবচেয়ে আগে হাল্ক হোগানকে রিসাইন করেন এবং তাকে ব্রান্ড আম্বাস্যাডরের মতো ব্যবহার করে তার কোম্পানির জনপ্রিয়তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। এরপরে আলাদা আলাদা অঞ্চলে কোম্পানির পপুলারিটী বাড়াবার জন্য ভিন্স অঞ্চলগুলিতে ফেমাস রেসলারদেরকে বেছে বেছে সাইন করে সেইসব অঞ্চলে প্রচার এবং শো করা শুরু করে। ভিন্স জানতো যে প্রচার এবং লাভ সমানুপাতে থাকে তাই প্রচার বাড়ানোর জন্য যা যা করতে হয় ভিন্স সেই সবই করা শুরু করে দিল।

•• ভিন্সের দ্বারা প্রতিপক্ষ দমন :- ভিন্স যেন তেন প্রকারেন NWA এর অন্যান্য সব প্রোমোটারদের পেটের ভাতে লাথি মারতে শুরু করেন এবং সক্ষম হন। তার ক্ষমতার এবং কূটনীতির জেরে, হয় টিভিতে ব্রডকাস্ট বন্ধ করে কিংবা পপুলার রেসলারদেরকে নিজের কোম্পানিতে সাইন করে ভিন্স সবাইয়ের ব্যবসা ডকে উঠিয়ে দেয়। সেইসময় একটি মাত্র প্রোমোটার বাকি ছিল যে ভিন্সের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো এবং তার নাম ছিল Jim Crockett, যিনি NWA এর কিছু প্রোমোটারদের কোম্পানিকে কিনে নিয়ে তার নিজের কোম্পানি JCP –এর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিল। 

সেইসময় ভিন্সের WWF –এর শো রেসেলমেনিয়া ৩ বিশালভাবে হিট করেছিল এবং সেই শো তে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ৯০,০০০ দর্শক উপস্থিত ছিল, এটাই ছিল প্রথম পেই পার ভিউ ইভেন্ট যেটা অন্যতম সাফল্যতা অর্জন করেছিল। 

এখন ভিন্সের সঙ্গে কম্পিটিশন করার জন্য  Jim Crockett –কে তার রেসলারদের প্রচুর পরিমানে অর্থ প্রদান করতে হচ্ছিল কারন তা না করলে ভিন্স তার কোম্পানির রেসলারদেরকে WWF-এ সাইন করিয়ে নিত, এবং এই প্রচুর পরিমান অর্থের তাগিদে জিম পেই পার ভিউ ইভেন্টের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল এবং সেটা সফল করার কাজেই লেগে পরেছিল। তার প্রথম PPV ইভেন্ট ছিল ১৯৮৭ তে হওয়া Starrcade, যেটির ভাত মারার জন্য ভিন্স নিজের ইভেন্ট Survivor Series –এর সূচনা করে এবং সমস্ত কেবিল অপারেটরদের জানিয়ে দেয় যে তারা হয় তার শো দেখাবে নাহলে জিমের, দুইটা একসঙ্গে দেখানো চলবে না। এবং যারা জিমের শো দেখাবে তাদেরকে খুব সম্ভবত রেসেল্মেনিয়া IV (4) দেখাবার সুযোগ দেওয়া হবে না! এই বিশ্রী শর্তের ফলে জিমের PPV মাটিতে মারা গেল, হাতে গুনা কয়েকটা অপারেটর বাদে কেউই তার শো দেখাতে চাইলো না। 

জিম হার মানলো না সে আবার চেস্টা করলো এবং ভিন্স বাবাজি আবার তার বিশ্রী খেলা খেললো, জিমের পরের PPV এর বিপক্ষে ভিন্স USA নেটওয়ার্কে তার শো Royal Rumble বিনামূল্যে দেখাবার অনুমতি দিল ফলে জিমের ভাত আবারও মারা গেল। এইভাবে ক্রমাগত বুলি হওয়ার ফলে এবং অন্যান্য কিছু নিজস্ব ত্রুটির কারনে জিমের বিজনেস ডকে উঠার যোগার হল।

•• টেড টার্নারের এবং WCW –এর আগমন :-  ভিন্সের সাফল্য এবং জিমের পরাজয় এইদুটিকেই দেখতে পারছিলনা এমন একজন মানুষ ছিলেন টেড টার্নার (Ted Turner), যিনি ছিলেন Turner Broadcasting Station বা TBS এর প্রতিষ্ঠাতা। তার নেটওয়ার্কে অন্যতম পপুলার শো ছিল এই রেসলিং তাই এই খেলার প্রতি তার মনে একটা আলাদা জায়গা ছিল। ভিন্সের জন্যও তার মনে একটা আলাদা জায়গা ছিল বটে তবে এটা ছিল নেগেটিভ জায়গা, কয়েক বছর আগে ভিন্সের সঙ্গে খুবই খারাপ ডিল হওয়াতে টার্নার ভিন্সের উপরে চটে ছিল অনেকদিন ধরেই। 

টেড, জিমের হাতে থাকা NWA এর মালিকানা কিনে নেন (জিমের হাতে পুরো মালিকানা ছিল না) এবং  তার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তিনি JCP এর নাম পরিবর্তন করে World Championship Wrestling বা WCW রাখেন (যেটা তার চ্যানেলে সম্প্রচারিত GCW শো এর নামানুসারে হয়)। 

টেড কিন্তু প্রথমে মোটেও সফল হতে পারেননি, তার কোম্পানিও সহজেই ডুবে যেত যদি তিনি নিজেই TBS এর মালিক না হতেন, ফলে সম্প্রচার বন্ধ হবার কোন ভয় ছিলনা এবং তার কোম্পানির অধঃপতন প্রতিরোধ করা গিয়েছিল। আবার সেইসময় WCW স্বাধীন ছিলনা, তারা NWA এর অংশ ছিল কিন্তু ১৯৯৩ সালে রিক ফ্লেয়ার WCW এর প্রেসিডেন্ট Jim Herd এর সঙ্গে ঝামেলা করে WWF এ চলে যাওয়ায় টাইটেল ভ্যাকান্ট হয়ে যায় এবং তারফলে প্রথমে NWA ও WCW এর টাইটেল আলাদা হয় ও তারপরে WCW, NWA থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। 

অন্যদিকে WWF এর কাছে WCW মাথাচাড়া দেওয়ার আগেই সেটাকে দমন করার এই সুযোগ ছিল যদিও নিজেদের জ্বালায় জর্জরিত ভিন্স এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

••  WWF এর মানের পতন এবং WCW এর উথান :- ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে WWF একইসঙ্গে দুইটি গুরুতর সমস্যা যথা সেক্স স্কান্ড্যাল এবং ড্রাগ নিয়ে ঝুলে পড়েছিল। যার ফলস্বরূপ দির্ঘ সময় ধরে WWF এর মান তলানিতে ঠেকে ছিল। সেই সময়ে তাদের করা ভালো জিনিস বলতে ছিল শুধুমাত্র Monday Night Raw নামের একটি শো চালু করা, যেটি তখনকার চিরাচরিত রেসলিং শো থেকে আলাদা ছিল। Raw তেই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক রেসলিং এর আয়োজন করা হয়, তার আগের শো গুলিতে মূলত এক পপুলার শক্তিশালী রেসলার নিম্নমানের রেসলারদের ধোলাই দিয়ে ম্যাচ জিতে যেত।  

অন্যদিকে WCW, WWF এর ব্যর্থতার কারনে এই দীর্ঘ সময় টিকে থাকার পরে ফাইনালি আশার আলো দেখতে পায় এবং সেই আশার আলো ছিল Eric Bischoff, এরিকের আগের কার্যকর্তাগুলি ছিলেন অকর্মণ্য, এরিক WCW তে আসার পরেই টার্নারের অর্থের সঠিক প্রয়োগ শুরু হয়। WWF এর কূটনীতির ধাঁচেই এরিকও অর্থের জোরে WWF থেকে ভালো রেসলারদেরকে নিজেদের কোম্পানিতে সাইন করা শুরু করেন। যার মধ্যে অন্যতম সাইনিং ছিল WWF থেকে রিটায়ার্ড হওয়া হাল্ক হোগান। 

এরপর ১৯৯৫ সালে WWF এর “Monday Night Raw” –এর বিপরীতে এরিক WCW এর একটী শো “Monday Nitro” যেটি টার্নারের স্টেশন TNT (TBS এর সহ চ্যানেল) –তে ‘Raw’ এর দিনেই সম্প্রচারিত হত ফলে দুই মহা কোম্পানির রেটিঙের লড়াই লেগে যায় যেটিকে Monday Night War বলা হয়। আর চ্যানেলের উপরে এরিকদেরই নিয়ন্ত্রন থাকায় WWF যাই করুক না কেন WCW সময়ের ফাঁদে তাকে দমন করতো। 

এটা ছাড়াও এরিক একটি মোক্ষম চাল চালে এবং Raw টিভিতে এয়ার হওয়ার আগেই তার রেজাল্ট ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে…এর বিরুদ্ধে WWF সেরকম কিছুই করে উঠতে পারছিল না। এরপরে WWF এর পতন ত্বরান্বিত করে ১৯৯৬ সালে Kevin Nash এবং Scott Hall –দের মতো সুপারস্টারদের WWF থেকে WCW তে চলে আসা। উল্লেখ্য তারা WCW তে হোগানের সঙ্গে একটী যুগান্তকারী টিম গঠন করে যেটি New World Order বা NWO নামে অধিক পরিচিত ছিল। 

এইভাবে WCW এর সাফল্য এবং WWF এর রেসলারদের তৎকালীন নিম্নমানের গিমিকের কারনে ভিন্সের কোম্পানি প্রায় মাটীতে এসে পতিত হয়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা না করলে হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।

•• WWF এর পুনঃউত্থান :- বিলুপ্তি যখন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল তখন WWF এর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয় স্ক্রিপ্ট রাইটার Vince Russo, তিনি WWF এর তখনকার ভোঁতা স্টোরিলাইনকে ধারালো রূপ দেন এবং এর মধ্যে অনেক আড্যাল্ট কনটেন্ট যুক্ত করেন। 

স্টোরিলাইনকে তীক্ষ্ণ করার জন্য ভিন্স সেইসময় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যেমন Diva দের দিয়ে রেসলিং করানো, যুগান্তকারী Degeneration-X তৈরি করা, এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ স্টিভ অস্টিনের মতো রেসলারকে পুশ দেওয়া যিনি হিল হিসাবেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন এবং অস্টিনের সঙ্গে ভিন্স মিকম্যানের ফিউডেই WWF সব হিসাব উলট-পালট করে দেয়। 

কিন্তু অন্যদিকে TBS, Time Warnar এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে WCW তাদের শো কে পরিবারকেন্দ্রিক এবং ছোট-বড় সবাইয়ের দেখার মতো রাখতে বাধ্য হয় অর্থাৎ তাদেরকে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট পরিহার করতে হয়। এইভাবে চলতে চলতে এক সময় Monday Night War এ WWF এর পাল্লা ভারি হয় যখন Mike Tyson, Raw তে হাজির হয় (যেটি ছিল Holyfield II এর কান কামড়িয়ে কেটে নেওয়ার পরে টিভিতে টাইসনের প্রথম আবির্ভাব)। টাইসনকে দেখে মানুষ অবাক হয়ে যায় এবং Raw এর পপুলারিটী আকাশছোঁয়া হয়ে যায়, অন্যদিকে অস্টিন ছাড়াও WWF দ্য রকের মতো প্রতিভা নিয়ে আসে এবং তাদের অন্যান্য কম বয়সী প্রতিভাদেরও পুশ দেওয়া শুরু করে।

•• WCW এর পতন :- অন্যদিকে WCW তে পুরনো রেসলারদের কাছে গ্যারেন্টেড কন্ট্রাক্টস ছিল ফলে WCW কে তাদের উপরেই ধ্যান দিতে হচ্ছিল, ফলস্বরূপ নতুন প্রতিভাদের জায়গা খুবই কমে গিয়েছিল এবং নতুনরা সবাই WCW এর উপরে খুব চটে গিয়েছিল এবং তারা একে একে WCW ছেড়ে WWF –এ গিয়ে যোগ দিচ্ছিল। 

এরফলে WCW ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রানপ্রন চেষ্টা করে এবং ফেমাস ব্যক্তিত্বদের উপরে প্রচুর পরিমান টাকা খরচ করা শুরু করে কিন্তু সেইসবই বিফলে যায়, অর্থাৎ WCW এর পতন চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছিল। এইসময় আবার WWF SmackDown নামের নতুন এক শো শুরু করে ফলে WCW এর রেটিং আরও তলানিতে যেতে থাকে। তখন WCW, WWF এর ভাগ্যের চাকা ঘোরানো রাইটার Vince Russo কে সাইন করে যদিও তার রাইটিং এর ম্যাজিক WCW তে মোটেও কাজ করে উঠতে পারেনি এবং এইসমস্ত জিনিসের ফলস্বরূপ ২০০০ সালে WCW ১০০ মিলিয়ন ডলার লসের সম্মুখীন হয় যেটা তখনকার দিনে মারাত্মক আকারের লস ছিল। 

Time Warnar এর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারনে টেড টার্নারের হাতে WCW এর পুরা কন্ট্রোল ছিল না এবং এইসময় এই বিশাল অঙ্কের লসের সম্মুখীন হওয়াতে ২০০১ সালে শেষপর্যন্ত তারা WCW কে WWF এর হাতে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। সেই সাথেই ভিন্স মিকম্যানের এতদিনের রেসলিং দুনিয়া একায় কন্ট্রোল করার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়ে উঠে, ফলস্বরূপ সে বিলিওনেয়ার এর খেতাব অর্জন করে। যদিও টার্নারের সঙ্গে ভিন্সের রাইভেলারির ইতিহাস এখানেই খতম হয়ে যায়নি এবং বর্তমানেও চলছে।

•• Raw ও SmackDown এর পৃথকীকরণ এবং WWF থেকে WWE হওয়া :- WWF, WCW-কে কিনে নেওয়ার পরে কিছুটা স্ক্রিপ্টজনিত কারনে আর কিছুটা ভিন্সের কারনে WCW রেসলারদের ধার নষ্ট হয়ে যায়। হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেসলার থাকায়, কয়েক বছর আগের “Monday Night War” –এর ফিলিং ফিরিয়ে আনার জন্য ভিন্স এক বুদ্ধি বার করে এবং WWF কে Raw এবং SmackDown –এই দুইটি ব্রান্ডে ভাগ করে দেন। এবং পরবর্তিতে Raw vs SmackDown ম্যাচের সৃষ্টি হয়। যদিও আরও পরে ২০১১ সালে ব্র্যান্ড দুইটিকে পুনরায় মিলিত করে দেওয়া হয়, এবং তারপরে ২০১৬ সালে NXT থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত রেসলারের কারণে আবার Raw এবং SD পৃথকীকরণ করা হয়, কিন্তু সেটা আলাদা ব্যাপার। 

অন্যদিকে ২০০২ সালে WWF –এর নাম নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কোর্ট-কেশে ভিন্সের কোম্পানি World Wildlife Fund –এর কাছে হেরে যায়, এবং WWF নামটি শুধুমাত্র তারাই (World Wildlife Fund) ব্যবহারের অনুমতি পায়।  ফলে বাধ্য হয়ে World Wrestling Federation এর নাম পরিবর্তন করে World Wrestling Entertainment রাখা হয় যার ফলে WWE নামের সৃষ্টি হয়, যেটিকে বর্তমানে আমরা সবাই এককথায় চিনতে পারি।

◘ NWA এর কি হল? :=  ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাসে ফিলাডেলফিয়ার Eastern Championship Wrestling (ECW) , NWA থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং এরপর NWA তার আগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এরপরেও কিছু প্রোমোটার ছিল যারা NWA এর সদস্যপদে ছিল এবং NWA নাম ব্যবহার করতো কিন্তু ২০১২ সালে NWA তার সদস্যপদ বন্ধ করে দেই এবং বিভিন্ন রেসলিং প্রমোশনকে এটির নামের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে NWA একটি একক প্রমোশনে পরিবর্তিত হয়।

◘ ECW এর কি হল? :=  ২০০১ সালে এটি লসের কারনে ডুবে যায়। ভিন্স তখন এর সমস্ত সম্পদ কিনে নেয়। পরবর্তিতে ২০০৫ সালে WWE, ECW এর নাম ব্যবহার করে একটি দারুন জনপ্রিয় DVD এবং একটি মাত্র PPV এর আয়োজন করে। ECW নামের প্রতি অসাধারন ফ্যান সাপোর্টের জন্য ২০০৬ সালে WWE তাদের তৃতীয় রেসলিং ব্রান্ড হিসাবে ECW কে নিয়ে আসে। মোটামুটী ৪ (4) বছর চলার পরে এটি ২০১০ এর ফেব্রুয়ারীতে এসে সমাপ্ত হয় এবং পরবর্তি সপ্তাহে এর জায়গাতে NXT নামক শো এর উদ্ভাবন করা হয়। যেটি বর্তমানে WWE এর নতুন ট্যালেন্ট সার্চে ব্যবহৃত হয়।

◘ ROH তাহলে কী? ঃ= ২০০১ সালে ECW কে WWE কিনে নেওয়ার পরে "RF Video" নামের একটি প্রো রেসলিং ভিডিও বিতরণ কোম্পানি অসুবিধায় পরে যায় কারণ ECW ই ছিল তাদের বিতরণ করা সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রমোশন। ফলে ECW এর ঘাটতি পূরণের জন্য "RF Video" কোম্পানির মালিক Rob Feinstein বাধ্য হয়ে নিজেদের একটা প্রমোশন তৈরি করে, যেটি পরবর্তীকালে Ring of Honor বা ROH নামে পরিচিত হয়। 

◘ AEW কিভাবে এলো? ঃ= পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে Cody Rhodes এবং The Young Bucks মিলে কোটিপতি টোনি খান এবং তার বাবা শাহিদ খানের মালিকানায় "All Elite Wrestling" বা AEW শুরু করে। টেড টার্নারের সৃষ্ট চ্যানেল TNT, WWE এর বর্তমানের সবথেকে বড় কম্পিটিশন AEW কে সম্প্রচার করা শুরু করে। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের জন্য আশা করা হচ্ছে  এটি ভবিষ্যতেও WWE কে যথেষ্ট পরিমাণ টেক্কা দিতে পারবে। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ TNA তাহলে কোথায়? ঃ= আপনারা জানলে অবাক হবেন TNA ও NWA -এর অংশ ছিল। WCW এর পতনের পর ২০০২ সালে Jeff Jarrett এবং Jerry Jarrett, NWA -এর অংশ হিসাবে NWA: Total Nonstop Action (NWA-TNA) -এর সূচনা করেন। কিন্তু ২০০৪ সালে এটি NWA থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে Total Nonstop Action Wrestling (TNA) নাম ধারণ করে যেটি বর্তমানে Global Force Wrestling (GFW) নামে পরিচিত। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ NJPW তাহলে কী? ঃ= New Japan Pro-Wrestling বা NJPW হল জাপানের একটি বৃহৎ রেসলিং প্রমোশন যেটি Antonio Inoki, ১৯৭২ সালে Japan Pro Wrestling Alliance থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি করে। এটির সাথেও সময়ে সময়ে NWA এর যোগ ছিল, যথা ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত, তারপরে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এবং তারপরে খুব অল্প সময়ের জন্য ২০০০ এবং ২০১০ সালে। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ ইন্ডি সার্কিট কী তাহলে? ঃ= ইন্ডি সার্কিট হল ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিট অর্থাৎ স্বাধীন প্রমোশন সমূহ। আমরা আগেই জেনেছি NWA তৈরি হওয়ার আগে প্রোমোটারেরা সবাই নিজের নিজের মতো করে রেসলিং পরিচালনা করতো। এইসব প্রমোশনগুলি থেকেই মূলত ইন্ডি সার্কিটের সূচনা হয়। মূলত ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে আগেকার দিনের মতো আঞ্চলিক রেসলিং পুনর্জীবিত করার উদ্দেশ্যে অনেক ইন্ডি সার্কিট  গঠিত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। (বিস্তারিত দেখুন)

এদের মধ্যে অনেকের পপুলারিটি নাই বললেই চলে আবার কিছু কিছু বেশ পপুলারও বটে। জনপ্রিয় কিছু সার্কিটের উদাহরণ হল ঃ Combat Zone Wrestling (CZW), Pro Wrestling Guerrilla (PWG), American X Wrestling, East Coast Professional Wrestling, Independent Wrestling Federation প্রভৃতি। উল্লেখ্য জনপ্রিয় Lucha Underground (বিস্তারিত পড়ুন) -এও ইন্ডি রেসলারেরা রেসলিং করে। 

• উপরের লেখাটি পড়ে বুঝতেই পারছেন প্রো-রেসলিং এর ইতিহাসে  NWA এর গুরুত্ব কতখানি, বলতে গেলে পুরো প্রো রেসলিং ইতিহাসই NWA কে কেন্দ্র করে গঠিত। NWA থেকে জনপ্রিয় হয়ে আলাদা হওয়া এবং শেষে WWE এর কাছে বিক্রি হওয়া, এটা প্রো-রেসলিং এর একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও কিছু জনপ্রিয় রেসলিং প্রমোশনকে হয়তো একদিন WWE কিনে নেবে।

আবার ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায় এমন কিছু ঘটনাও আপনারা দেখতে পাবেন, যেমন জিন্দার মহালকে চ্যাম্পিয়ন করে, স্পটলাইটে এনে ভারতে WWE তাদের ব্যবসা বিস্তার করতে চাইছে, অর্থাৎ আঞ্চলিক রেসলারদেরকে ব্যবহার করে ব্যবসা বিস্তার করা এখনও প্রচলিত রয়েছে। আশা করি এবার আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলেন, এই পর্যন্তই থাক তাহলে আজকে...।।

::: WWE এর সম্পুর্ন ইতিহাস :::


আমরা (প্রায়) সবাই বর্তমানে রেসলিং বলতে শুধু WWE কেই বুঝি এবং এইরকম ভাবার কারণও আছে যথেষ্ট, অন্যান্য প্রো-রেসলিং কোম্পানিগুলি পপুলারিটী এবং ইনকামে WWE এর থেকে বহু-বহু দূরে অবস্থিত, তাই অদুর ভবিষ্যতে যে রেসলিং এর ধারনা পালটাবে এমনটা আমার মনে হয়না। 

সে যাইহোক, আমাদের অনেকেরই জানার ইচ্ছা থাকে যে এই WWE এর শুরুর শুরু হয় কোথা থেকে? কিকরে এলো এই WWE? এইসব প্রশ্নের উত্তর যারা জানেন তারা পোস্টটা সেফলি ইগ্নোর করতে পারেন কিন্তু যারা জানেননা তাদের জন্যই এই পোস্টটী লিখতে শুরু করছি…। 

এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা বর্তমানে WWE নামে পরিচিত কোম্পানিটির শুরু, উত্থান, পতন প্রভৃতি বিষয়ে অনেককিছু জানতে পারবেন এবং এছাড়াও অন্যান্য রেসলিং কোম্পানিগুলির সম্বন্ধে কিছু বেসিক জিনিস জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ধৈর্যশীলতার পরিচয় পাবো এই পোস্টের মাধ্যমে কারন পোস্টটি আকারে যথেষ্টই বড় যদিও অতি অল্প সময়ে লেখা। আপনাদের সুবিধার জন্য পোস্টটিকে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে দিব, তাহলে আর বেশী না বকে শুরু করা যাক –

•• শুরুর শুরু, NWA :- এইসবকিছুর শুরুর শুরু হয় The National Wrestling Alliance বা NWA থেকে। “Alliance” শব্দের অর্থ হল সঙ্ঘ বা জোট, NWA প্রকৃতপক্ষে ছিল কয়েকজন প্রবর্তকদের মিলিত সঙ্ঘ বা পরিচালনা পর্ষদ, এই প্রবর্তক (বা প্রোমোটার) –রা আগেকার দিনে নিজ নিজ এলাকায় আঞ্চলিক স্তরে নিজেদের মতো করে প্রো রেসলিং চালাতো, এবং এদের রেসলারেরাও মূলত সেইসব নির্দিষ্ট অঞ্চলেই জনপ্রিয় ছিল, এরা আলাদা আলাদা থাকায় এদের পপুলারিটি বা সংগঠনও ছিল খুব নিম্নমানের। পরবর্তিতে ১৯৪৮ সালে এদের জোট থেকেই NWA এর উৎপত্তি হয়।

জোট হবার পর থেকে তাদের সবাইয়ের মধ্যে একটিই চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট থাকতো অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নও থাকতো একটায় 😛 । এখন এদের মধ্যে মাঝে মাঝেই চ্যাম্পিয়ন নিয়ে টানাটানি পরতো, কারন একজন রেসলার দেশের একটী অংশে ফেমাস হলেই যে সে অন্য অংশেও ফেমাস হবে তার কোন মানে নাই। প্রত্যেক প্রোমোটারই নিজেদের এলাকাতে পপুলার কোন রেসলারকে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখতে চাইতো, তাই এদের মধ্যে ঝামেলা তো লাগারই ছিল।  

•• WWWF এবং WWF এর উৎপত্তি :-  এদের মধ্যে উত্তরপূর্বের প্রোমোটারেরা ছিল বাকিদের থেকে অধিক ক্ষমতাবান এবং অর্থবানও বটে, তাই এরা সবসময় নিজেদের জোর খাটাবার চেস্টা করতো। বাডি রজার্স (Buddy Rogers) ছিল তখনকার চ্যাম্পিয়ন যে ছিল উত্তর পুর্বে ফেমাস তাই তখন বাকি দিকের প্রোমোটারেরা মিলে ঠিক করলো যে চ্যাম্পিয়ন এমন কাউকে করা হবে যে উত্তরপূর্বে পুপুলার নয়। 

যেমন ভাবা তেমন কাজ, তারা মিলিতভাবে ভোটের মাধ্যমে (উত্তরপুর্বে ফেমাস নয় এমন একজন রেসলার) Lou Thez কে চয়ন করলো এবং সে Buddy কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল, যেটা উত্তরপূর্বের প্রোমোটারেরা (বিশেষ করে ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র) মেনে নিতে পারলো না। আর উত্তরপুর্বের হাতে সেরকম ক্ষমতাও ছিল ফলে বাকি দিকের প্রোমোটারদের থেকে তথা NWA থেকে আলাদা হয়ে এরা নিজেদের একটা আলাদা রেসলিং ফেডারেশন খুলে বসলো এবং এর নাম দিল World Wide Wrestling Federation বা WWWF। 

এই ফেডারেশনের মধ্যে সবথেকে পাওয়ারফুল প্রোমোটাররা ছিল ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র (Vince McMahon Sr.) এবং টুটস মন্ড্‌ট (Toots Mondt)। ১৯৭৬ সালে Mondt –এর মৃত্যুর পরে WWWF তার নাম পরিবর্তন করে WWF (World Wrestling Federation) করে নেয়।

•• মালিক পরিবর্তন এবং ভিন্স মিকম্যানের আগমন :- ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র ছিলেন খুবই গোঁড়া প্রকৃতির মানুষ এবং তিনি ভাবতেন রেসলারদেরকে সবাইয়ের নজরের বাইরে তথা স্পটলাইটের বাইরে রাখা উচিত। হাল্ক হোগান একটা মুভিতে অংশগ্রহন করাতে ভিন্স (সিনিয়র) তাকে ফায়ার করে দেন, যেটি ছিল ভিন্সের গোঁড়ামির মোক্ষম উদাহরণ। ১৯৮৩ সালে ভিন্স মিকম্যান সিনিয়র, WWF কে তার পুত্র ভিন্স মিকম্যানকে বিক্রি করে দেন (হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন, ভিন্সের ফ্যামিলি এরকমই, বাপের পরে বেটা সামলায় না, বেটাকে কিনে নিতে হয়, মজা করছি)। 

ভিন্স মিকম্যান (সিনিয়রের পুত্র) ছিলেন অতিরিক্ত চালাক এবং দূরদর্শিতা সম্পন্ন মানুষ। অন্যান্য রেসলিং কোম্পানিদের বিপরীতে ভিন্সের মাথায় ছিল যে কেবল (Cable) টিভির রাজত্ব বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে রেসলিং আর শুধুমাত্রই আঞ্চলিক স্তরে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, একে গ্লোবাল স্তরে নিয়ে যেতে হবে। 

ভিন্স সবচেয়ে আগে হাল্ক হোগানকে রিসাইন করেন এবং তাকে ব্রান্ড আম্বাস্যাডরের মতো ব্যবহার করে তার কোম্পানির জনপ্রিয়তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। এরপরে আলাদা আলাদা অঞ্চলে কোম্পানির পপুলারিটী বাড়াবার জন্য ভিন্স অঞ্চলগুলিতে ফেমাস রেসলারদেরকে বেছে বেছে সাইন করে সেইসব অঞ্চলে প্রচার এবং শো করা শুরু করে। ভিন্স জানতো যে প্রচার এবং লাভ সমানুপাতে থাকে তাই প্রচার বাড়ানোর জন্য যা যা করতে হয় ভিন্স সেই সবই করা শুরু করে দিল।

•• ভিন্সের দ্বারা প্রতিপক্ষ দমন :- ভিন্স যেন তেন প্রকারেন NWA এর অন্যান্য সব প্রোমোটারদের পেটের ভাতে লাথি মারতে শুরু করেন এবং সক্ষম হন। তার ক্ষমতার এবং কূটনীতির জেরে, হয় টিভিতে ব্রডকাস্ট বন্ধ করে কিংবা পপুলার রেসলারদেরকে নিজের কোম্পানিতে সাইন করে ভিন্স সবাইয়ের ব্যবসা ডকে উঠিয়ে দেয়। সেইসময় একটি মাত্র প্রোমোটার বাকি ছিল যে ভিন্সের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো এবং তার নাম ছিল Jim Crockett, যিনি NWA এর কিছু প্রোমোটারদের কোম্পানিকে কিনে নিয়ে তার নিজের কোম্পানি JCP –এর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিল। 

সেইসময় ভিন্সের WWF –এর শো রেসেলমেনিয়া ৩ বিশালভাবে হিট করেছিল এবং সেই শো তে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ৯০,০০০ দর্শক উপস্থিত ছিল, এটাই ছিল প্রথম পেই পার ভিউ ইভেন্ট যেটা অন্যতম সাফল্যতা অর্জন করেছিল। 

এখন ভিন্সের সঙ্গে কম্পিটিশন করার জন্য  Jim Crockett –কে তার রেসলারদের প্রচুর পরিমানে অর্থ প্রদান করতে হচ্ছিল কারন তা না করলে ভিন্স তার কোম্পানির রেসলারদেরকে WWF-এ সাইন করিয়ে নিত, এবং এই প্রচুর পরিমান অর্থের তাগিদে জিম পেই পার ভিউ ইভেন্টের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল এবং সেটা সফল করার কাজেই লেগে পরেছিল। তার প্রথম PPV ইভেন্ট ছিল ১৯৮৭ তে হওয়া Starrcade, যেটির ভাত মারার জন্য ভিন্স নিজের ইভেন্ট Survivor Series –এর সূচনা করে এবং সমস্ত কেবিল অপারেটরদের জানিয়ে দেয় যে তারা হয় তার শো দেখাবে নাহলে জিমের, দুইটা একসঙ্গে দেখানো চলবে না। এবং যারা জিমের শো দেখাবে তাদেরকে খুব সম্ভবত রেসেল্মেনিয়া IV (4) দেখাবার সুযোগ দেওয়া হবে না! এই বিশ্রী শর্তের ফলে জিমের PPV মাটিতে মারা গেল, হাতে গুনা কয়েকটা অপারেটর বাদে কেউই তার শো দেখাতে চাইলো না। 

জিম হার মানলো না সে আবার চেস্টা করলো এবং ভিন্স বাবাজি আবার তার বিশ্রী খেলা খেললো, জিমের পরের PPV এর বিপক্ষে ভিন্স USA নেটওয়ার্কে তার শো Royal Rumble বিনামূল্যে দেখাবার অনুমতি দিল ফলে জিমের ভাত আবারও মারা গেল। এইভাবে ক্রমাগত বুলি হওয়ার ফলে এবং অন্যান্য কিছু নিজস্ব ত্রুটির কারনে জিমের বিজনেস ডকে উঠার যোগার হল।

•• টেড টার্নারের এবং WCW –এর আগমন :-  ভিন্সের সাফল্য এবং জিমের পরাজয় এইদুটিকেই দেখতে পারছিলনা এমন একজন মানুষ ছিলেন টেড টার্নার (Ted Turner), যিনি ছিলেন Turner Broadcasting Station বা TBS এর প্রতিষ্ঠাতা। তার নেটওয়ার্কে অন্যতম পপুলার শো ছিল এই রেসলিং তাই এই খেলার প্রতি তার মনে একটা আলাদা জায়গা ছিল। ভিন্সের জন্যও তার মনে একটা আলাদা জায়গা ছিল বটে তবে এটা ছিল নেগেটিভ জায়গা, কয়েক বছর আগে ভিন্সের সঙ্গে খুবই খারাপ ডিল হওয়াতে টার্নার ভিন্সের উপরে চটে ছিল অনেকদিন ধরেই। 

টেড, জিমের হাতে থাকা NWA এর মালিকানা কিনে নেন (জিমের হাতে পুরো মালিকানা ছিল না) এবং  তার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তিনি JCP এর নাম পরিবর্তন করে World Championship Wrestling বা WCW রাখেন (যেটা তার চ্যানেলে সম্প্রচারিত GCW শো এর নামানুসারে হয়)। 

টেড কিন্তু প্রথমে মোটেও সফল হতে পারেননি, তার কোম্পানিও সহজেই ডুবে যেত যদি তিনি নিজেই TBS এর মালিক না হতেন, ফলে সম্প্রচার বন্ধ হবার কোন ভয় ছিলনা এবং তার কোম্পানির অধঃপতন প্রতিরোধ করা গিয়েছিল। আবার সেইসময় WCW স্বাধীন ছিলনা, তারা NWA এর অংশ ছিল কিন্তু ১৯৯৩ সালে রিক ফ্লেয়ার WCW এর প্রেসিডেন্ট Jim Herd এর সঙ্গে ঝামেলা করে WWF এ চলে যাওয়ায় টাইটেল ভ্যাকান্ট হয়ে যায় এবং তারফলে প্রথমে NWA ও WCW এর টাইটেল আলাদা হয় ও তারপরে WCW, NWA থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। 

অন্যদিকে WWF এর কাছে WCW মাথাচাড়া দেওয়ার আগেই সেটাকে দমন করার এই সুযোগ ছিল যদিও নিজেদের জ্বালায় জর্জরিত ভিন্স এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

••  WWF এর মানের পতন এবং WCW এর উথান :- ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে WWF একইসঙ্গে দুইটি গুরুতর সমস্যা যথা সেক্স স্কান্ড্যাল এবং ড্রাগ নিয়ে ঝুলে পড়েছিল। যার ফলস্বরূপ দির্ঘ সময় ধরে WWF এর মান তলানিতে ঠেকে ছিল। সেই সময়ে তাদের করা ভালো জিনিস বলতে ছিল শুধুমাত্র Monday Night Raw নামের একটি শো চালু করা, যেটি তখনকার চিরাচরিত রেসলিং শো থেকে আলাদা ছিল। Raw তেই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক রেসলিং এর আয়োজন করা হয়, তার আগের শো গুলিতে মূলত এক পপুলার শক্তিশালী রেসলার নিম্নমানের রেসলারদের ধোলাই দিয়ে ম্যাচ জিতে যেত।  

অন্যদিকে WCW, WWF এর ব্যর্থতার কারনে এই দীর্ঘ সময় টিকে থাকার পরে ফাইনালি আশার আলো দেখতে পায় এবং সেই আশার আলো ছিল Eric Bischoff, এরিকের আগের কার্যকর্তাগুলি ছিলেন অকর্মণ্য, এরিক WCW তে আসার পরেই টার্নারের অর্থের সঠিক প্রয়োগ শুরু হয়। WWF এর কূটনীতির ধাঁচেই এরিকও অর্থের জোরে WWF থেকে ভালো রেসলারদেরকে নিজেদের কোম্পানিতে সাইন করা শুরু করেন। যার মধ্যে অন্যতম সাইনিং ছিল WWF থেকে রিটায়ার্ড হওয়া হাল্ক হোগান। 

এরপর ১৯৯৫ সালে WWF এর “Monday Night Raw” –এর বিপরীতে এরিক WCW এর একটী শো “Monday Nitro” যেটি টার্নারের স্টেশন TNT (TBS এর সহ চ্যানেল) –তে ‘Raw’ এর দিনেই সম্প্রচারিত হত ফলে দুই মহা কোম্পানির রেটিঙের লড়াই লেগে যায় যেটিকে Monday Night War বলা হয়। আর চ্যানেলের উপরে এরিকদেরই নিয়ন্ত্রন থাকায় WWF যাই করুক না কেন WCW সময়ের ফাঁদে তাকে দমন করতো। 

এটা ছাড়াও এরিক একটি মোক্ষম চাল চালে এবং Raw টিভিতে এয়ার হওয়ার আগেই তার রেজাল্ট ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে…এর বিরুদ্ধে WWF সেরকম কিছুই করে উঠতে পারছিল না। এরপরে WWF এর পতন ত্বরান্বিত করে ১৯৯৬ সালে Kevin Nash এবং Scott Hall –দের মতো সুপারস্টারদের WWF থেকে WCW তে চলে আসা। উল্লেখ্য তারা WCW তে হোগানের সঙ্গে একটী যুগান্তকারী টিম গঠন করে যেটি New World Order বা NWO নামে অধিক পরিচিত ছিল। 

এইভাবে WCW এর সাফল্য এবং WWF এর রেসলারদের তৎকালীন নিম্নমানের গিমিকের কারনে ভিন্সের কোম্পানি প্রায় মাটীতে এসে পতিত হয়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা না করলে হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।

•• WWF এর পুনঃউত্থান :- বিলুপ্তি যখন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল তখন WWF এর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয় স্ক্রিপ্ট রাইটার Vince Russo, তিনি WWF এর তখনকার ভোঁতা স্টোরিলাইনকে ধারালো রূপ দেন এবং এর মধ্যে অনেক আড্যাল্ট কনটেন্ট যুক্ত করেন। 

স্টোরিলাইনকে তীক্ষ্ণ করার জন্য ভিন্স সেইসময় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যেমন Diva দের দিয়ে রেসলিং করানো, যুগান্তকারী Degeneration-X তৈরি করা, এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ স্টিভ অস্টিনের মতো রেসলারকে পুশ দেওয়া যিনি হিল হিসাবেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন এবং অস্টিনের সঙ্গে ভিন্স মিকম্যানের ফিউডেই WWF সব হিসাব উলট-পালট করে দেয়। 

কিন্তু অন্যদিকে TBS, Time Warnar এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে WCW তাদের শো কে পরিবারকেন্দ্রিক এবং ছোট-বড় সবাইয়ের দেখার মতো রাখতে বাধ্য হয় অর্থাৎ তাদেরকে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট পরিহার করতে হয়। এইভাবে চলতে চলতে এক সময় Monday Night War এ WWF এর পাল্লা ভারি হয় যখন Mike Tyson, Raw তে হাজির হয় (যেটি ছিল Holyfield II এর কান কামড়িয়ে কেটে নেওয়ার পরে টিভিতে টাইসনের প্রথম আবির্ভাব)। টাইসনকে দেখে মানুষ অবাক হয়ে যায় এবং Raw এর পপুলারিটী আকাশছোঁয়া হয়ে যায়, অন্যদিকে অস্টিন ছাড়াও WWF দ্য রকের মতো প্রতিভা নিয়ে আসে এবং তাদের অন্যান্য কম বয়সী প্রতিভাদেরও পুশ দেওয়া শুরু করে।

•• WCW এর পতন :- অন্যদিকে WCW তে পুরনো রেসলারদের কাছে গ্যারেন্টেড কন্ট্রাক্টস ছিল ফলে WCW কে তাদের উপরেই ধ্যান দিতে হচ্ছিল, ফলস্বরূপ নতুন প্রতিভাদের জায়গা খুবই কমে গিয়েছিল এবং নতুনরা সবাই WCW এর উপরে খুব চটে গিয়েছিল এবং তারা একে একে WCW ছেড়ে WWF –এ গিয়ে যোগ দিচ্ছিল। 

এরফলে WCW ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রানপ্রন চেষ্টা করে এবং ফেমাস ব্যক্তিত্বদের উপরে প্রচুর পরিমান টাকা খরচ করা শুরু করে কিন্তু সেইসবই বিফলে যায়, অর্থাৎ WCW এর পতন চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছিল। এইসময় আবার WWF SmackDown নামের নতুন এক শো শুরু করে ফলে WCW এর রেটিং আরও তলানিতে যেতে থাকে। তখন WCW, WWF এর ভাগ্যের চাকা ঘোরানো রাইটার Vince Russo কে সাইন করে যদিও তার রাইটিং এর ম্যাজিক WCW তে মোটেও কাজ করে উঠতে পারেনি এবং এইসমস্ত জিনিসের ফলস্বরূপ ২০০০ সালে WCW ১০০ মিলিয়ন ডলার লসের সম্মুখীন হয় যেটা তখনকার দিনে মারাত্মক আকারের লস ছিল। 

Time Warnar এর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারনে টেড টার্নারের হাতে WCW এর পুরা কন্ট্রোল ছিল না এবং এইসময় এই বিশাল অঙ্কের লসের সম্মুখীন হওয়াতে ২০০১ সালে শেষপর্যন্ত তারা WCW কে WWF এর হাতে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। সেই সাথেই ভিন্স মিকম্যানের এতদিনের রেসলিং দুনিয়া একায় কন্ট্রোল করার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়ে উঠে, ফলস্বরূপ সে বিলিওনেয়ার এর খেতাব অর্জন করে। যদিও টার্নারের সঙ্গে ভিন্সের রাইভেলারির ইতিহাস এখানেই খতম হয়ে যায়নি এবং বর্তমানেও চলছে।

•• Raw ও SmackDown এর পৃথকীকরণ এবং WWF থেকে WWE হওয়া :- WWF, WCW-কে কিনে নেওয়ার পরে কিছুটা স্ক্রিপ্টজনিত কারনে আর কিছুটা ভিন্সের কারনে WCW রেসলারদের ধার নষ্ট হয়ে যায়। হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেসলার থাকায়, কয়েক বছর আগের “Monday Night War” –এর ফিলিং ফিরিয়ে আনার জন্য ভিন্স এক বুদ্ধি বার করে এবং WWF কে Raw এবং SmackDown –এই দুইটি ব্রান্ডে ভাগ করে দেন। এবং পরবর্তিতে Raw vs SmackDown ম্যাচের সৃষ্টি হয়। যদিও আরও পরে ২০১১ সালে ব্র্যান্ড দুইটিকে পুনরায় মিলিত করে দেওয়া হয়, এবং তারপরে ২০১৬ সালে NXT থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত রেসলারের কারণে আবার Raw এবং SD পৃথকীকরণ করা হয়, কিন্তু সেটা আলাদা ব্যাপার। 

অন্যদিকে ২০০২ সালে WWF –এর নাম নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কোর্ট-কেশে ভিন্সের কোম্পানি World Wildlife Fund –এর কাছে হেরে যায়, এবং WWF নামটি শুধুমাত্র তারাই (World Wildlife Fund) ব্যবহারের অনুমতি পায়।  ফলে বাধ্য হয়ে World Wrestling Federation এর নাম পরিবর্তন করে World Wrestling Entertainment রাখা হয় যার ফলে WWE নামের সৃষ্টি হয়, যেটিকে বর্তমানে আমরা সবাই এককথায় চিনতে পারি।

◘ NWA এর কি হল? :=  ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাসে ফিলাডেলফিয়ার Eastern Championship Wrestling (ECW) , NWA থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং এরপর NWA তার আগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এরপরেও কিছু প্রোমোটার ছিল যারা NWA এর সদস্যপদে ছিল এবং NWA নাম ব্যবহার করতো কিন্তু ২০১২ সালে NWA তার সদস্যপদ বন্ধ করে দেই এবং বিভিন্ন রেসলিং প্রমোশনকে এটির নামের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে NWA একটি একক প্রমোশনে পরিবর্তিত হয়।

◘ ECW এর কি হল? :=  ২০০১ সালে এটি লসের কারনে ডুবে যায়। ভিন্স তখন এর সমস্ত সম্পদ কিনে নেয়। পরবর্তিতে ২০০৫ সালে WWE, ECW এর নাম ব্যবহার করে একটি দারুন জনপ্রিয় DVD এবং একটি মাত্র PPV এর আয়োজন করে। ECW নামের প্রতি অসাধারন ফ্যান সাপোর্টের জন্য ২০০৬ সালে WWE তাদের তৃতীয় রেসলিং ব্রান্ড হিসাবে ECW কে নিয়ে আসে। মোটামুটী ৪ (4) বছর চলার পরে এটি ২০১০ এর ফেব্রুয়ারীতে এসে সমাপ্ত হয় এবং পরবর্তি সপ্তাহে এর জায়গাতে NXT নামক শো এর উদ্ভাবন করা হয়। যেটি বর্তমানে WWE এর নতুন ট্যালেন্ট সার্চে ব্যবহৃত হয়।

◘ ROH তাহলে কী? ঃ= ২০০১ সালে ECW কে WWE কিনে নেওয়ার পরে "RF Video" নামের একটি প্রো রেসলিং ভিডিও বিতরণ কোম্পানি অসুবিধায় পরে যায় কারণ ECW ই ছিল তাদের বিতরণ করা সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রমোশন। ফলে ECW এর ঘাটতি পূরণের জন্য "RF Video" কোম্পানির মালিক Rob Feinstein বাধ্য হয়ে নিজেদের একটা প্রমোশন তৈরি করে, যেটি পরবর্তীকালে Ring of Honor বা ROH নামে পরিচিত হয়। 

◘ AEW কিভাবে এলো? ঃ= পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে Cody Rhodes এবং The Young Bucks মিলে কোটিপতি টোনি খান এবং তার বাবা শাহিদ খানের মালিকানায় "All Elite Wrestling" বা AEW শুরু করে। টেড টার্নারের সৃষ্ট চ্যানেল TNT, WWE এর বর্তমানের সবথেকে বড় কম্পিটিশন AEW কে সম্প্রচার করা শুরু করে। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের জন্য আশা করা হচ্ছে  এটি ভবিষ্যতেও WWE কে যথেষ্ট পরিমাণ টেক্কা দিতে পারবে। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ TNA তাহলে কোথায়? ঃ= আপনারা জানলে অবাক হবেন TNA ও NWA -এর অংশ ছিল। WCW এর পতনের পর ২০০২ সালে Jeff Jarrett এবং Jerry Jarrett, NWA -এর অংশ হিসাবে NWA: Total Nonstop Action (NWA-TNA) -এর সূচনা করেন। কিন্তু ২০০৪ সালে এটি NWA থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে Total Nonstop Action Wrestling (TNA) নাম ধারণ করে যেটি বর্তমানে Global Force Wrestling (GFW) নামে পরিচিত। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ NJPW তাহলে কী? ঃ= New Japan Pro-Wrestling বা NJPW হল জাপানের একটি বৃহৎ রেসলিং প্রমোশন যেটি Antonio Inoki, ১৯৭২ সালে Japan Pro Wrestling Alliance থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি করে। এটির সাথেও সময়ে সময়ে NWA এর যোগ ছিল, যথা ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত, তারপরে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এবং তারপরে খুব অল্প সময়ের জন্য ২০০০ এবং ২০১০ সালে। (বিস্তারিত দেখুন)

◘ ইন্ডি সার্কিট কী তাহলে? ঃ= ইন্ডি সার্কিট হল ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিট অর্থাৎ স্বাধীন প্রমোশন সমূহ। আমরা আগেই জেনেছি NWA তৈরি হওয়ার আগে প্রোমোটারেরা সবাই নিজের নিজের মতো করে রেসলিং পরিচালনা করতো। এইসব প্রমোশনগুলি থেকেই মূলত ইন্ডি সার্কিটের সূচনা হয়। মূলত ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে আগেকার দিনের মতো আঞ্চলিক রেসলিং পুনর্জীবিত করার উদ্দেশ্যে অনেক ইন্ডি সার্কিট  গঠিত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। (বিস্তারিত দেখুন)

এদের মধ্যে অনেকের পপুলারিটি নাই বললেই চলে আবার কিছু কিছু বেশ পপুলারও বটে। জনপ্রিয় কিছু সার্কিটের উদাহরণ হল ঃ Combat Zone Wrestling (CZW), Pro Wrestling Guerrilla (PWG), American X Wrestling, East Coast Professional Wrestling, Independent Wrestling Federation প্রভৃতি। উল্লেখ্য জনপ্রিয় Lucha Underground (বিস্তারিত পড়ুন) -এও ইন্ডি রেসলারেরা রেসলিং করে। 

• উপরের লেখাটি পড়ে বুঝতেই পারছেন প্রো-রেসলিং এর ইতিহাসে  NWA এর গুরুত্ব কতখানি, বলতে গেলে পুরো প্রো রেসলিং ইতিহাসই NWA কে কেন্দ্র করে গঠিত। NWA থেকে জনপ্রিয় হয়ে আলাদা হওয়া এবং শেষে WWE এর কাছে বিক্রি হওয়া, এটা প্রো-রেসলিং এর একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও কিছু জনপ্রিয় রেসলিং প্রমোশনকে হয়তো একদিন WWE কিনে নেবে।

আবার ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায় এমন কিছু ঘটনাও আপনারা দেখতে পাবেন, যেমন জিন্দার মহালকে চ্যাম্পিয়ন করে, স্পটলাইটে এনে ভারতে WWE তাদের ব্যবসা বিস্তার করতে চাইছে, অর্থাৎ আঞ্চলিক রেসলারদেরকে ব্যবহার করে ব্যবসা বিস্তার করা এখনও প্রচলিত রয়েছে। আশা করি এবার আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলেন, এই পর্যন্তই থাক তাহলে আজকে...।।

কোন মন্তব্য নেই

কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ!